logo
ads
১৯ জুলাই, ২০২৫

আমিই সেই ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইন্টার্ন চিকিৎসক’

অনলাইন ডেস্ক

আমিই সেই ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইন্টার্ন চিকিৎসক’

16px

৩ আগস্ট ২০২৪। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সকালেই আমার ডিউটি ছিল। চারপাশে অদ্ভুত এক নীরবতা। সকাল ৯টার দিকে ডক্টরস রুমে গিয়ে দেখি কয়েকজন মিলে প্রথম আলো পড়তে পড়তে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছেন। কাছে গিয়ে দেখি, ‘ছুটির দিনে’তে ছাপা হওয়া ‘এক ইন্টার্ন চিকিৎসকের ডায়েরি’ পড়ছেন তাঁরা। বুকটা ধক করে উঠল। এই লেখার লেখক যে স্বয়ং আমি! পরিস্থিতি বিবেচনায় লেখার সঙ্গে লেখকের নাম ছাপা হয়নি, শুধু বলা হয়েছে—‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইন্টার্ন চিকিৎসক’!

আমি লিখতে পছন্দ করি। তবে হাসপাতালে স্বচক্ষে দেখা নির্মমতার রক্তাক্ত স্মৃতি বাসায় ফিরে আরেকবার রোমন্থন করার কোনো ইচ্ছা জাগেনি। তবে প্রথম আলো থেকে যখন ঢাকা মেডিকেলের অবস্থা সম্পর্কে লিখতে বলা হলো, তখন কাজটাকে দায়িত্ব বলে মনে হলো। একজন ইন্টার্নের চেয়ে ভালো কেই–বা জানাতে পারে হাসপাতালে আসা মানুষের করুণ অবস্থা। চিকিৎসা নিতে আসা গুলিবিদ্ধ মানুষের আর্তনাদ ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের আহাজারিতে কেটে যাচ্ছে নির্ঘুম রাত। সেসব রাতের কথা লিখে মনে হলো, মন কিছুটা শান্ত হয়েছে।

ডক্টরস রুমের মতো হাসপাতালের অনেক জায়গায়ই সেদিন লেখাটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। কেউ প্রশংসা করছিলেন, কেউবা তাচ্ছিল্যের সুরে মন্তব্য করছিলেন। আমি কারও কথাই শুনছি না, এমন ভাব করে পাশ থেকে চুপচাপ শুনছি। শেষ কবে এভাবে মুখ লুকিয়ে থেকেছি, মনে পড়ে না। এক বড় ভাই তো হঠাৎ জিজ্ঞাসা করে বসলেন, ‘এই তুই না ইন্টার্ন? তোদের ব্যাচে কে লিখেছে এটা?’

যে মানুষটা লিখেছে তার আপাদমস্তক আমার জানা, তবুও অকপটে বলে দিলাম, ‘জানি না।’

ফেসবুকে প্রথম আলোর পেজে ঢুকে দেখি, হাজার হাজার মানুষ লেখাটা পড়েছেন। মন্তব্য করেছেন শত মানুষ। কেউ কেউ লিখেছেন, ‘পড়ে তাদের চোখে পানি এসে গিয়েছে।’

রিপ্লাই দিতে ইচ্ছা করল, আমরা নীরবে কত কেঁদেছি, তার সামান্য অংশই তো লিখেছি মাত্র। রাতের বেলা আহত ব্যক্তিদের রক্ত গায়ে মেখে হলে ফেরার দুর্ভাগ্য তো আর আপনাদের হয়নি। কী দরকার ছিল এত রক্ত ঝরানোর? এখনো কেন দেশটা শান্ত হলো না?

পরিচিত অনেকেই লেখাটা শেয়ার করেছে। অন্য সময় হলে হয়তো গর্ব করে সত্যটা বলতাম। এখন বরং আড়াল করতে হলো। আমরা যাঁরা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি, তাঁদের দেখে নেওয়ার হুমকি ছিল। তাই আর সত্য বলার সুযোগ কোথায়?

সব বাধা সত্ত্বেও একজন ডাক্তার বলেই হয়তো আহত ব্যক্তিদের পাশে থাকতে পেরেছি। নিহত ব্যক্তিদের শেষবারের মতো চোখ দুটি বন্ধ করে দেওয়ার সুযোগ হয়েছে। ইতিহাসের একজন সাক্ষী হতে পেরেছি।

সেদিন ডিউটি শেষে হলে ফিরে এলাম। হলের ক্যানটিনে চা খেতে বসেও বেরিয়ে আসতে হলো। কারণ, পাশের টেবিলে একজন অনলাইনে আমার লেখাটা পড়ছেন। আবার না কোন প্রশ্নের মুখে পড়ি, কত আর মিথ্যা বলা যায়!

ads
dainikamarbangla

সর্বশেষ খবর

হাইলাইটস

বিশেষ সংবাদ

ads