১৮ আগস্ট, ২০২৫

ঢাকা শিশু হাসপাতালের দুই ক্যান্টিন ম্যানেজারের তেলেসমাতি পর্ব ১

ঢাকা শিশু হাসপাতালের দুই ক্যান্টিন ম্যানেজারের তেলেসমাতি পর্ব ১

বিশেষ প্রতিবেদন কামাল হোসেন 

যার  যেটা  কাজ নয় , তাকে দিয়ে সে কাজ করানো হচ্ছে । স্বায়ত্তশাসিত ঢাকা  শিশু হাসপাতাল প্রশাসনের এমন অনিয়ম এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে । অভিযোগ আছে এর পেছনে রয়েছে হাসপাতালটির প্রশাসনিক শাখার কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সুবিধার। এসব কারণে খালি পদে জনবল নিয়োগ না করে  এক  পদে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে একাধিক পদে নিয়োগ দিয়ে রাখছেন ।

এমন অভিযোগের বিষয়ে তদন্তে জানা যায় , ঢাকা  শিশু হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত  দুই ক্যান্টিন ম্যানেজারকে সংশ্লিষ্ট কাজে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও  একাধিক পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন  হাসপাতাল প্রশাসন । সরেজমিন তদন্তে গিয়ে এমন প্রমাণ পায়,  ওয়ান ঢাকা নিউজের প্রতিবেদক । শুধু তাই নয় একাধিক পদে থাকা  ভারপ্রাপ্তরা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে চাকরির বিধিমালা ভঙ্গ  সহ   তাদের অবৈধ আয়ের  প্রমাণও পাওয়া যায় ।

সরেজমিন তদন্তে যা যা পাওয়া গেল

ক্যান্টিন ম্যানেজার কাম মোয়াজ্জেম হিসেবে ২০১০ সালের আগে পড়ে  ঢাকা  শিশু হাসপাতলে  নিয়োগ পান মিজানুর রহমান , মিজান হুজুর । হাসপাতাল সূত্রে জানা যায় , ক্যান্টিন ম্যানেজার হিসেবে মিজানুর রহমানকে  নিয়োগ দেয়ার পর আরবি  শিক্ষায় দক্ষতা থাকায় তাকে হাসপাতালটির মসজিদের মোয়াজ্জেম হিসেবেও দায়িত্ব দেয় হাসপাতাল প্রশাসন । বিভিন্ন সূত্র বলছে সংশ্লিষ্ট পদে বেশ কয়েক বছর চাকরির পর , হাসপাতাল থেকে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা ও আয়ের পথ  খোঁজেন  এই মিজান হুজুর । এরপর তৎকালীন হাসপাতাল প্রশাসনের সহযোগিতায় ক্যান্টিন ম্যানেজার হয়েও , হাসপাতাল মসজিদের মোয়াজ্জেমের অতিরিক্ত দায়িত্বের  সুযোগ নেন তিনি  । নিজ খরচে  হাসপাতালের জমিতে করেন বাড়ি নির্মাণ। যা তিনি গত ১৬ বছর  এখনো  দখলে রেখেছেন ।

এখানেই শেষ নয় , অভিযোগ আছে  হাসপাতাল প্রশাসন শাখার  কিছু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে  ,আরো বাড়তি দায়িত্বে ,বাড়তি আয়ের সুযোগ খোঁজেন  মিজানুর রহমান , মিজান হুজুর। সফলভাবে সেই সুযোগ পেয়েও যান তিনি  , জানা যায়  হাসপাতালের ওয়াডমাস্টারের শূন্য পদের লোক নিয়োগ না করে, মিজানুর রহমান মিজান, হুজুরকে সোনার হরিণ ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টারের দায়িত্ব দেন হাসপাতাল প্রশাসন । অনুসন্ধান বলছে গত এক যুগ ধরে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি । একই সাথে ক্যান্টিন ম্যানেজার ও মোয়াজ্জেমের পদের সুবাদে গত ১৫ বছর হাসপাতালে জমি দখলে রেখেছেন তিনি । অথচ হাসপাতাল মসজিদের বর্তমান  মোয়াজ্জেমের  দায়িত্ব পালন করছেন অন্য কেউ । 

এখানে কি শেষ ? বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ওয়ার্ড মাস্টার মিজানুর রহমান মিজান হুজুরের সাথে ওয়ান ঢাকা নিউজের প্রতিবেদকের আলোচনার ফাঁক-ফোকর বেরিয়ে আসে   হাসপাতালটির ক্যান্টিন ম্যানেজার  থেকে মসজিদের  মোয়াজ্জেম এরপর  সিনিয়র ওয়ার্ড মাস্টার ,বাড়তি সময় করছেন  ফার্মেসিতে চাকরি করার গল্প । বুঝতে বাকি থাকে না এতসব সুযোগ সুবিধায় আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়া মিজান হুজুরের রয়েছে  ফার্মেসি ব্যবসা ।  অবশ্য প্রতিবেদক এর কাছে শুরুতে ফার্মেসি ব্যবসার কথা স্বীকার করলেও  পরে  ফার্মেসিতে চাকরি করার দাবি করেন তিনি । 

পরে সিনিয়র ভারপ্রাপ্ত  ওয়ার্ড মাস্টার মিজান হুজুরের কথার সত্যতা  খোঁজ শুরু করে ওয়ান ঢাকা নিউজ । প্রশ্ন করা হয় শিশু হাসপাতালের প্রধান ফটকের দুপাশে ফুটপাত ব্যবসায়ীদের কাছে হাসপাতালটির ওয়ার্ড মাস্টার মিজান হুজুরের ফার্মেসির ঠিকানা । এ সময় কয়েকজন দোকানী  প্রতিবেদককে শিশু হাসপাতালের সীমানায় সিটি কর্পোরেশনের ফুটপাতে পাকাপোক্তভাবে গড়ে তোলা  আজিম ফার্মেসি দেখিয়ে দেন  । বুঝতে আর বাকি রইল না । চাকরির শর্ত ভঙ্গ করে বছরে পর বছর তিনি পরিচালনা করে আসছেন এই অবৈধ ফার্মেসি ব্যবসা । সূত্র বলছে হাসপাতলে রোগীদের দিয়ে কেনানো অতিরিক্ত ঔষধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী হাত বদলে বারবার  বিক্রি হয় এই ফার্মেসি থেকে ।

ভারপ্রাপ্ত ওয়াডমাস্টার মিজানুর রহমানের এতসব দায়িত্ব এবং কর্মকাণ্ড নিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের অতিরিক্ত  সহকারি পরিচালক  আজহারুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে ,জনবল সংকটে এমন বাড়তি দায়িত্ব দেয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি ,  তবে   হাসপাতালটিতে স্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত কোন  কর্মকর্তা-কর্মচারী , অবসর সময়ে কোথাও কোন চাকরি বা হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কোন ব্যবসায়  জড়িত  হলে তা হবে 
স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে চাকরি বিধিমালা ভঙ্গ করা হবে বলে জানান তিনি ।

এ সময়ে হাসপাতালটির অতিরিক্ত সহকারী পরিচালক আরো জানান , হাসপাতাল মসজিদের মোয়াজ্জেমের পদে থাকা অবস্থায় হাসপাতালে জমিতে বাড়ি নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয় । তবে উক্ত পদে না থেকে পদ পরিবর্তন করে কিভাবে সেই জমি ওয়ার্ড মাস্টার  মিজানুর রহমান দখলে রেখেছেন এর কোন উত্তর জানেন না তিনি ।