২০ আগস্ট, ২০২৫

তেঁতুলিয়ায় চড়া মূল্যে সার কিনতে হচ্ছে চাষিদের, সংকটের আশঙ্কা

তেঁতুলিয়ায় চড়া মূল্যে সার কিনতে হচ্ছে চাষিদের, সংকটের আশঙ্কা

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চড়া মূল্যে সার কিনতে হচ্ছে চাষিদের। অন্যদিকে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সার বরাদ্দের পরিমাণ অন্যান্য অর্থবছরের তুলনায় কম হওয়ায় সার সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলার বেশ কিছু চাষি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নতুন করে সার বিভাজনের দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদন করেছে। 

জানা গেছে, প্রতি কেজী ইউরিয়া ২৭ টাকা, টিএসপি ২৭ টাকা, ডিএপি ২১ টাকা ও এমএওপি ২০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু ডিলার ও ক্ষুদ্র দোকানদারদের কাছ থেকে প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে চাষিদের। অন্যদিকে এ বছর প্রায় ১ হাজার ৯শ’ ১৩ মেট্রিকটন সার কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এ উপজেলায়। 

চাষিদের লিখিত আবেদন সূত্রে জানা গেছে, তেঁতুলিয়ায় ১৪ হাজার ৯শ’ ৫০ হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার হেক্টর জমিতে চায়ের চাষ হচ্ছে। কফি, লিচু, আম,কমলা, মাল্টা, কাঠালসহ অন্যান্য ফলের চাষ হচ্ছে প্রায় ৫শ’ হেক্টর জমিতে। বাকি জমিতে আমন ধান, বোরো ধান, গম, পাট, ভুট্টা, মরিচ,আলুসহ নানা রকম শাক সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। পর্যটন এলাকা হওয়ায় কাঠ বাদাম, কাজু বাদাম, কফি, লংগান, রামবুটা সহ বিদেশি ফল, ফুল, ওষুধি গাছের বাগানও রয়েছে এই উপজেলায়। 

পঞ্চগড় জেলায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সারের চাহিদা অনুযায়ি বরাদ্দ দেয়া হয় ইউরিয়া ৪৫ হাজার ৯শ’ ৮২ মেট্রিক টন, টিএসপি ১৪ হাজার ৯শ’ ১৬, ডিএপি ১৭ হাজার ২শ’ ৪৫, এমওপি ২২ হাজার ৫শ’ ৪৬ মেট্রিক টন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় অতিরিক্ত ১ হাজার মেট্রিক টন সার বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়। এই বরাদ্দের ভিত্তিতে ৫ উপজেলায় সার বিভাজন করা হয়। 

এতে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে তেঁতুলিয়া  উপজেলায় ইউরিয়া ৫ হাজার ৮শ’ ৮২ মেট্রিক টন, টিএসপি ২ হাজার ৭শ’ ১৬ মেট্রিক টন, ডিএপি ৩ হাজার ১শ’ মেট্রিক টন এবং এমওপি সারের বরাদ্দ ছিলো ৩ হাজার ৪শ’ ৫০ মেট্রিক টন। কিন্তু ২০২৫ -২০২৬ অর্থবছরে ইউরিয়ার বরাদ্দ ঠিক থাকলেও গত অর্থবছরের তুলনায়  ৭শ’ ৭১ মেট্রিক টন কম দিয়ে টিএসপি ১ হাজার ৯শ’ ৪৫ মেট্রিক টন, ডিএপি ৬শ’ ৬৭ মেট্রিক টন কম দিয়ে ২ হাজার ৪শ’ ৩৩ মেট্রিক টন, এমওপি ৪শ’ ৭৫ মেট্রিক টন কম দিয়ে ২ হাজার ৯শ’ ৭৫ মেট্রিকটন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। 

চাষিদের অভিযোগ, গত অর্থবছরের তুলনায় সার বরাদ্দের পরিমাণ বেশি হওয়ার কথা থাকলেও এ বছর কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এতে সার সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমনের ভরা মৌসুমে সার সংকট দেখা দিলে আমন আবাদ ব্যহত হবে। ফলন কম হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। 

তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান এলাকার চাষি মাসুদ করিম জানান, এ অর্থবছরে সার বরাদ্দের পরিমাণ বেশি হওয়ার কথা কিন্তু বরাদ্দ কম দেয়া হয়েছে। এই সুযোগে সার ব্যবসায়িরা সারের দাম বেশি নিচ্ছে। তেঁতুলিয়া উপজেলা একটি কৃষি প্রধান উপজেলা। এই এলাকায় সারের বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া দুঃখজনক। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে আমনের জন্য বরাদ্দকৃত সার চাষিরা চা বাগানসহ অন্যান্য ফসলে ব্যবহার করছেন। চা বাগানের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সার বরাদ্দ দেয় না। এটা দেয়ার কথা চা বোর্ডের। তাই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার তামান্না ফেরদৌস জানান, আগের মতোই সারের চাহিদা দেয়া হয়েছে। এবার চাহিদা অনুযায়ি বিভাজনও করা হয়েছে। কিন্তু চাসহ বিভিন্ন আবাদের কারণে সারের সংকট দেখা দিতে পারে। এই উপজেলায় আরও সারের প্রয়োজন রয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মতিন জানান, সার বিভাজনে কোন সমস্যা নেই। এখন একই চাষি চা বাগান এবং আমন চাষাবাদে সার ব্যবহার করছেন। চা বাগানের জন্য সার বরাদ্দ পাই না। তাই এই সংকট। চা বাগানসহ হিসেব করলে অবশ্যই সারের বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। মূলত চা বাগানের জন্য সার বরাদ্দ দেয়ার কথা শিল্প মন্ত্রণালয়ের। আমরা বার বার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার জন্য চা বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা কোন উদ্যোগ নেয়নি।