১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিতে যাওয়া কে এই সুশীলা কার্কি?

নেপালের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিতে যাওয়া কে এই সুশীলা কার্কি?

বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে নেপাল। শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের পর এবার আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়েছেন সেখানকার জেন-জিরা। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হন নেপালের কমিউনিস্ট প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। সরকারের প্রায় সব মন্ত্রীই হয় দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, নয়তো আত্মগোপনে আছেন। এ অবস্থায় অস্থির নেপালের শাসনভার কার কাঁধে উঠছে, এ নিয়ে চলছিল বিস্তর জল্পনা-কল্পনা।

এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল দেশটির জনপ্রিয় গায়ক বলেন্দ্র শাহ ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নাম। তবে, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত বর্ষীয়ান সুশীলা কার্কিকেই নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ঘোষণা করা হলো। 

খবর এনডিটিভি ও ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেন-জি বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধি, প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌদেল এবং সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেলের মধ্যে ঐকমত্যের পর সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট রাম চন্দ্র পৌদেলের প্রেস উপদেষ্টা কিরণ পোখরেল জানান, শুক্রবার সকাল থেকে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় শীতল নিবাসে ব্যাপক আলোচনার পর সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগের বিষয়ে একটি সমঝোতা হয়।

এই পদক্ষেপ জেন-জি বিক্ষোভকারীদের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। অবিলম্বে সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা। পোখরেল আরও জানান, কার্কি আজ রাত ৯টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এর মধ্য দিয়ে নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন সুশীলা কার্কি। তার নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি ছোট মন্ত্রিসভার থাকবে এবং আজ শুক্রবার রাতেই প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রিসভা পার্লামেন্টের পাশাপাশি সাতটি প্রাদেশিক পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। 

রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভের মুখে গত মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) কেপি শর্মা ওলির সরকার পতনের পর নেপালে স্থিতিশীলতা ফেরাতে জেন–জিদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে সেনাবাহিনী। নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব কে দেবেন, তা নিয়ে চলে আলোচনা। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, দীর্ঘ ৪ ঘণ্টা আলোচনার পর জেন-জি শিক্ষার্থীরা সুশীলার নাম প্রস্তাব করেন।

তবে, সুশীলা কার্কির বয়স নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির একজন সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কুলমান ঘিসিং-এর নাম প্রস্তাব করে আন্দোলনকারীদের একাংশ। কাঠমান্ডুর মেয়র ৩৫ বছর বয়সি র‍্যাপার-রাজনীতিবিদ বলেন্দ্র শাহকেও প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছিল।

কিন্তু, বেশিরভাগ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় বলেন্দ্র শাহ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন এবং সুশীলা কার্কির প্রতি সমর্থন জানান। শেষ পর্যন্ত বর্ষীয়ান সুশীলা কার্কির ওপর আস্থা রাখছেন জেন-জি বিক্ষোভকারীরা।  

কে এই সুশীলা কার্কি? 

নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিতে যাওয়া সুশীলা কার্কি ভারতের উত্তরপ্রদেশের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে পড়াশোনা করেছেন। নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রথম এবং একমাত্র নারী প্রধান বিচারপতি ছিলেন তিনি। দুর্নীতির মামলায় এক মন্ত্রীর কারাদণ্ডসহ একাধিক ঐতিহাসিক রায়ের জন্য দেশটিতে ব্যাপক পরিচিত তিনি।

নেপালের প্রবীণ আইন বিশেষজ্ঞ কার্কি দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজের কঠোর অবস্থানের জন্য জনপ্রিয়। 

জানা যায়, ২০১৬ সালে নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন কার্কি। দায়িত্ব নেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই সততা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য নির্ভীক বিচারক হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ১৯৭৯ সালে বীরাটনগরে আইনজীবী হিসেবে তার পেশাজীবনের শুরু হয়।

নেপালের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির দায়িত্ব পালনের সময় কার্কি বেশ কিছু ঐতিহাসিক রায় দেন; যা তাকে সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত করে তোলে। দুর্নীতির দায়ে দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের মন্ত্রী জয়া প্রকাশ গুপ্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন তিনি। নেপালের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্ষমতাসীন কোনও মন্ত্রীকে দুর্নীতির মামলায় কারাগারে পাঠানোর ঘটনা ছিল এটি।

শান্তিরক্ষী মিশনে দুর্নীতি থেকে শুরু করে বিতর্কিত নিজগড় ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি নারীদের সন্তানের নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার সম্পর্কিত প্রগতিশীল রায়ও দিয়েছেন তিনি।

সুশীলা কার্কি ১৯৭৫ সালে ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় (বিএইচইউ) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি নেপালের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেন।

২০১৭ সালে কিছু রায়ের কারণে সরকারের বিরাগভাজণে পরিণত হন তিনি। সেই সময় ক্ষমতাসীন জোট দেশটির পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব উত্থাপন করে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু বলছে, এই অভিশংসন প্রস্তাবে তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও নির্বাহী ক্ষমতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়েছিল। বিশেষ করে পুলিশপ্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত এক বিরোধের কারণে তিনি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন।

ODNEWS/DS