১৯৬৮ সালে ৩৬০ শয্যার অবকাঠামো নিয়ে নির্মিত এই হাসপাতালে এত বছরে অবকাঠামোগত তেমন উন্নতি হয়নি। অথচ বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ নতুন রোগী এখানে ভর্তি হন। নিয়মিত ভর্তি থাকেন আড়াই হাজারেরও বেশি রোগী। আর বহির্বিভাগে চিকিত্সা নিতে আসেন প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার রোগী।
জনবল সংকট : হাসপাতালটি কাগজে-কলমে ১ হাজার শয্যার হলেও জনবল ৫০০ শয্যার হাসাপাতালের চেয়েও কম। বর্তমানে কর্মরত চিকিত্সক রয়েছেন ২৩১ জন। চিকিত্সকের ৯২টি পদ শূন্য রয়েছে। সিনিয়র স্টাফ নার্স ১ হাজার সাত জনের স্থলে রয়েছে ৯৫২, অন্যান্য কর্মকর্তা ৯ জনের স্থলে আছেন তিন জন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ১৬৩ জনের স্থলে রয়েছেন ৯২ জন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ৪২৬ জনের স্থলে রয়েছে ২০৪ জন।
এর মধ্যে বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি, ফিজিক্যাল মেডিসিন, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টারলোজি, স্নায়ু রোগের রেজিস্ট্রার পদ এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন, শিশু হেমাটোলজি, মানসিক, স্নায়ুরোগ, গ্যাস্ট্রোএন্টারলোজি, সার্জারি, অর্থোপ্লাস্টিক বিভাগ, শিশু সার্জারি ও ইউরোলজি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রারসহ ৩৩টি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য রয়েছে। অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক দিনে এক বার সকালে পরিদর্শন করলেও রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শূন্য থাকায় ভেঙে পড়েছে চিকিত্সাব্যবস্থা। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের চিকিত্সা পেতে যে সময় ক্ষেপণ হচ্ছে তাতে মুমূর্ষু রোগীদের অনেকে চিকিত্সা না পেয়ে মারা যাচ্ছেন। এদিকে মেডিক্যাল কলেজে ৩৪৫ জন শিক্ষকের অনুকূলে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১৮০ জন।
পদে পদে ভোগান্তি রোগীদের : প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মুমূর্ষু রোগী নিয়ে স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সযোগে এখানে আসার পর জরুরি বিভাগের বিড়ম্বনা কাটিয়ে যেতে হয় মেডিক্যাল অফিসারের কাছে। মেডিক্যাল অফিসার রোগীর সমস্যা শোনেন এবং কোন ইউনিটে ভর্তি হতে হবে তা লিখে দেন। এরপর ঐ ওয়ার্ডে রোগীকে নার্স কক্ষের দায়িত্বরত নার্স রিসিভ করেন এবং বেড না থাকায় ফ্লোরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর কোনো রোগী রেজিস্ট্রার বা সহকারী রেজিস্ট্রারের সেবা পেলে তিনি ভাগ্যবান। কেননা রোগী ভর্তি হওয়ার পর ওয়ার্ডে চিকিত্সা দেওয়ার প্রধান দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার পদগুলোতে সংকট প্রকট।
রেজিস্ট্রার পদে ৫০০ বেড অনুযায়ী মঞ্জুরিকৃত পদ ৪৯টির স্থলে রয়েছেন ৩৩ জন এবং সহকারী রেজিস্ট্রারের ৯৬টি পদের স্থলে রয়েছে ৬৭ জন। ওয়ার্ডগুলোতে ধারণক্ষমতার চার থেকে পাঁচ গুণ রোগী ভর্তি থাকায় ইন্টার্ন চিকিত্সকই একমাত্র ভরসা। যদিও মেডিক্যালের কাগজপত্রে প্রত্যেক ইউনিটে অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক সংযুক্ত রয়েছেন। তবে তাদের দেখা মেলা ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। অধিকাংশ রোগী দুই-তিন দিন অপেক্ষা করে উপায়ন্তর না পেয়ে মেডিক্যালে ভর্তি থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে চিকিত্সককে দেখিয়ে আসেন। সেখানে ভিজিট বাবদ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়। এর বাইরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ তো আছেই। ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য রয়েছে সিন্ডিকেট।
চিকিত্সাধীন রোগী, স্বজনসহ সচেতন মহলের অভিযোগ, বিষেশজ্ঞ চিকিত্সক কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় ইন্টার্ন, নার্স থেকে শুরু করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণেই চলে সেবা কার্যক্রম।
ওয়ার্ডগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে প্রত্যেক ওয়ার্ডে শিফট ভাগ করে দায়িত্বরতরা নিজেরাই নিয়ম-কানুন তৈরি করে রেখেছেন। রোগী ভর্তি থেকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত সব কার্যক্রম দেখভালে থাকা ট্রলিবয় থেকে সব পর্যায়ে চলে বাণিজ্য।
দিনের বেলায় হাসপাতালের পরিচালকসহ অন্যান্যরা থাকায় রোগী ও স্বজনরা দৌড়-ঝাঁপ করে সামান্য চিকিত্সাসেবা পেলেও বিকালের পর পুরো হাসপাতাল চলে যায় অসাধু কর্মচারীদের দখলে। মেডিক্যাল ও কলেজের শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবার চিঠি দিয়ে প্রত্যেক ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার একজনকে প্রধান করে সান্ধ্যকালীন পরিদর্শনের যে চিঠি দিয়েছেন তার কোনো কার্যকারিতা নেই। দুপুর ২টায় চিকিত্সকরা হাসপাতাল ত্যাগ করার পর থেকেই হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাণিজ্য বাড়তে থাকে। ইন্টার্ন বা নার্সদের সেবা পেতেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগী ও স্বজনদের নানা ব্যক্তির দ্বারস্থ হতে হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিশেষ পরিচয় ছাড়া (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সেনাবাহিনী, প্রশাসন কিংবা সাংবাদিক) সেবা মেলে না। দায়িত্বরতদের বাণিজ্যের কারণে এখানে চিকিত্সা পেতে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে ইন্টার্ন চিকিত্সক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে প্রায়ই সংঘাতে জড়াচ্ছেন রোগীর স্বজনরা।
মেডিক্যালমুখী নন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সব পর্যায়ে সংকটের পাশাপাশি অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকগণ যারা কর্মরত রয়েছেন তাদেরকে মেডিক্যালমুখী করা যাচ্ছে না। মেডিক্যাল পরিচালক ও কলেজের প্রিন্সিপাল এ বিষয়ে লিখিতভাবে অফিস আদেশ দিলেও তাতে কর্ণপাত করছেন না বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকগণ। যেসব অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক গত বেশ কয়েক বছর ধরে এ হাসপাতালের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বরিশাল নগরীতে ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তুলেছেন তাদেরকে মেডিক্যালে পাওয়া যায় না। যারা অপেক্ষাকৃত কম সময় ধরে রয়েছেন অথবা নাম-ডাক কম, তারা মেডিক্যালে এসে রোগীদের দেখার নামে নিজেদের গড়ে তোলা ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিকের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। মেডিক্যালে ভর্তি থাকলে বিনা চিকিত্সায় মৃত্যু হতে পারে—এমন ভয় দেখিয়ে কিংবা এর চেয়ে ভালো চিকিত্সার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিদিন এসব চিকিত্সক গড়ে ২০ জন করে রোগীকে বাইরের তিন-চারটি
প্রতিষ্ঠানের নাম বলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অসহায় রোগীরা বাধ্য হয়ে এসব চিকিত্সকের কথা মেনে বাইরের বিভিন্ন তকমা লাগানো প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনিস্টকে গিয়ে মোটা টাকার বিনিময়ে চিকিত্সাসেবা নিচ্ছেন। গরিব অসহায় রোগীদের মধ্যে যারা প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে পারেন না তাদেরকে চেম্বারে গিয়ে দেখা করতে বলা হয়। চেম্বারে গিয়ে ভিজিটসহ পরীক্ষানিরীক্ষার নামে গুনতে হয় বিপুল টাকা।
অবসরপ্রাপ্ত একাধিক চিকিত্সক জানান, তারা যখন ইন্টার্ন ছিলেন তখন সকাল-সন্ধ্যা বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা এসে রোগীদের যে চিকিত্সা দিতেন সেখান থেকেই হাতে-কলমে শিখতেন। এ বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে একাধিবার অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। গত বছর পাঁচজন চিকিত্সকের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে চিঠি এবং ১৭ জনকে শোকজ করলে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়। চিকিত্সকদের মেডিক্যালমুখী করার বিষয়ে উদ্যোগ নিলে তত্কালীন সহকারী পরিচালক ডা. মো. রেজওয়ানুর আলমকে (অর্থ ও ভান্ডার) চরমভাবে হেনস্থা করা হয়। কেবল হেনস্থাই নয় উলটো তাকে ৭ দিনের ছুটির কাগজ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর থেকে আরো ফ্রিস্টাইলে চলছে চিকিত্সকদের মেডিক্যালে অবস্থান ও চিকিত্সা।
শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের বর্তমান পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের সেবা না পেলে রোগী ও তার স্বজনরা সন্তুষ্ট হচ্ছেন না। তাই তিনি যোগদানের পর থেকেই চিকিত্সকদের নিয়মিত মেডিক্যালে যথাযথভাবে উপস্থিত থেকে চিকিত্সা দেওয়ার জন্য তাগিদ দিচ্ছেন। চিকিত্সকদের নিয়মিত আসার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে চিঠিও এসেছে। তাই সবাইকে নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে রোগীদের অসংখ্য অভিযোগ তার কাছে আসলেও চিকিত্সকরা নিয়মিত না হওয়ায় সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। পাশাপাশি সিন্ডিকেট সদস্যরা এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে পারছে।’
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. ফয়জুল বাশার দাবি করেন চিকিত্সকরা নিয়মিত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত থাকেন। তবে তার বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ অমিল পাওয়া যায় উপাধ্যক্ষ ডা. মো. আনোয়ার হোসেনের বক্তব্যে। উপাধ্যক্ষ বলেন, ‘চিকিত্সকরা মেডিক্যালে নিয়মিত হচ্ছেন না। তাদেরকে প্রাথমিকভাবে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। এরপরও যারা নিয়মকানুন মানবেন না তাদেরকে বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘পরিচালককে সঙ্গে নিয়ে আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মেডিক্যালের স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধিসহ চিকিত্সকদের নিয়মিতকরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
মেডিক্যালের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, যেসব চিকিত্সক নিয়মিত কলেজে কিংবা মেডিক্যালে আসছেন না তাদেরকে গোপনে গোপনে সতর্ক করা হচ্ছে। তারপরও যারা অনুপস্থিত থাকছেন তাদের গোপন তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। এ তালিকা প্রস্তুত করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
ভেতর-বাইরে শক্তিশালী সিন্ডিকেট : অনুসন্ধানে জানা গেছে, শের-ই-বাংলা মেডিক্যালকে পুঁজি করে চিকিত্সক থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পর্যন্ত সবার সমন্বয়ে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এছাড়াও সেখানকার রোগীদের জন্য সরবরাহের দুধ, রুটি, বিস্কুট, মাছ, মাংস, ডিম, শাকসবজি, ফল, গ্যাস, তেল, চাল, ওষুধ, আসবাবপত্র, পরীক্ষানিরীক্ষার সরঞ্জাম, ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ ক্রয়সহ একাধিক সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য গড়ে উঠেছে শক্তিশালী ঠিকাদারি সিন্ডিকেট। যুগ যুগ ধরে একই সিন্ডিকেটের অধীন পরিচালিত হওয়ায় তাদের কাছে সবাই যেন অসহায়। বিশেষ করে একই ঠিকাদাররা দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর ধরে অপ্রতিরোধ্য গতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করায় ‘সেভেন স্টার’ নামে পরিচিতিও পেয়েছে। মেডিক্যালের অভ্যন্তরে এক ধরনের এবং বাইরে অন্য সিন্ডিকেট দিন-রাত সমানতালে লুটপাটে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সরকার কিংবা পটপরিবর্তন হলেও এ সিন্ডিকেটের বাইরে এ মেডিক্যালের কোনো কার্যক্রমই সম্পন্ন হচ্ছে না। এ সিন্ডেকেটে চিকিত্সক, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সঙ্গে রয়েছেন মেডিক্যালের সামনের প্রায় ৩৫টি ডায়াগনস্টিক, ৫০টির অধিক ফার্মেসি। জানা গেছে, ডায়াগনস্টিকের পরীক্ষানিরীক্ষার টাকার ৩০ শতাংশ চিকিত্সক, ট্রলিম্যান ২০ শতাংশ লভ্যাংশ পেয়ে থাকেন। তবে সিটি স্ক্যানে নির্দিষ্ট চিকিত্সক পেয়ে থাকেন রোগীপ্রতি ১ হাজার এবং ট্রলিম্যান ৬০০ টাকা করে। এভাবে বছরের পর বছর এসব শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে এ মেডিক্যালের কোটি কোটি টাকার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষানিরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
ভর্তি থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রোগীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ : হাসপাতালে ভর্তি হলেই ট্রলি নিয়ে পৌঁছে দেওয়া হয় ওয়ার্ডে। সেখান থেকেই প্রথম আদায় করা হয় টাকা। এরপর ওয়ার্ডের সিট পাইয়ে দেওয়া, রোগীর ওষুধসহ বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার নামে হাতিয়ে নেওয়া হয় টাকা। মেডিক্যালের প্যাথলজি বন্ধ হয়ে গেলেই দালালরা রোগীদের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিকে টেস্ট করানোর জন্য নানাভাবে বাধ্য করেন। কেননা ইন্টার্নদের দেওয়া এসব পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য তখন একমাত্র তারাই ভরসা। আবার অধিকাংশ পরীক্ষারনিরীক্ষার জন্য এসব দালাল নির্ভর ডায়াগনস্টিক থেকে লোকজন এসে রক্ত নিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত চিকিত্সাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলে অ্যাম্বুলেন্স বা যে ধরনের গাড়ির প্রয়োজন তা-ও সরবরাহ করে টাকা হাতিয়ে নেন দালালরা।
রাতে শিক্ষানবিশদের দখলে চিকিত্সা : রাত যতই বাড়তে থাকে ততই ইন্টার্ন ও নার্স ছাড়া অন্য সিনিয়রদের সংখ্যা কমতে থাকে। রাতের ডিউটি থাকলেও যে যার মতো ঘুমিয়ে যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে রাত ১টার পর থেকে শিক্ষানবিশ নার্স আর ইন্টার্নরা দায়িত্ব পালন করেন। আর মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে এসব শিক্ষানবিশের ভুল চিকিত্সায় ঘটে অঘটন। এছাড়া অনেকে গভীর রাতে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার কথা বলে মেডিক্যালের সামনে ডায়াগনস্টিকে পাঠিয়ে দেন রোগীদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গভীর রাতে ঐ সব ডায়াগনস্টিকে দায়িত্বরতরা না থাকলেও পূর্ব থেকে সিল-স্বাক্ষর দেওয়া কাগজে পরীক্ষার রিপোর্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে অপচিকিত্সায় রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে রোগী কিংবা স্বজনদের কেউ কেউ প্রতিবাদ করলে এসব অসাধুদের বিশাল বাহিনীর কাছে অসহায় হয়ে পড়েন তারা।