৮ অক্টোবর, ২০২৫

শেখ হাসিনার আইনজীবী আজও তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করবেন

শেখ হাসিনার আইনজীবী আজও তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করবেন

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ তৃতীয় দিনের মতো জেরা করা হবে মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন এই জেরা করছেন।

বুধবার (৮ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলে এ জেরা অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে, মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করে নিজের মক্কেলদের পক্ষে বিভিন্ন সাফাইমূলক প্রশ্ন করেন। আন্দোলনকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি চালানোকে বাধ্যতামূলক দাবি করে তদন্ত কর্মকর্তার যুক্তি খণ্ডন করেন তিনি। দিনভর জেরা চললেও শেষ না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল আজ পর্যন্ত তা মুলতবি রাখে।

প্রসিকিউশনের পক্ষে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান, তারেক আবদুল্লাহ, মামুনুর রশীদসহ অন্যান্য সদস্য।

৬ অক্টোবর এই জেরা শুরু হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর। তিনি রাষ্ট্রপক্ষের ৫৪তম ও সর্বশেষ সাক্ষী। তার জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই আন্দোলন চলাকালীন ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড এবং ৫০টিরও বেশি জেলায় মারণাস্ত্র ব্যবহারের তথ্য উঠে আসে।

২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দিতে তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর যমুনা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করেন, যেখানে জুলাই আন্দোলনের নৃশংসতা তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দেন তিনি। তিনি জানান, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর তিন লাখ পাঁচ হাজার গুলি ছোড়া হয়েছিল। তার জবানবন্দি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ ছাড়া বিবিসি, আল-জাজিরা ও আমার দেশ-এ প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্রও দেখানো হয়।

২৮ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীরের জবানবন্দি শুরু হয়। ওই দিন তার জব্দ করা ১৭টি ভিডিও ট্রাইব্যুনালে দেখানো হয়, যেখানে জুলাই-আগস্টের নির্মমতার চিত্র ফুটে ওঠে।

মোট ২৫ কার্যদিবসে শেখ হাসিনার মামলায় ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। শেষ সাক্ষীর জেরা শেষ হলেই যুক্তিতর্ক ও রায়ের দিকে অগ্রসর হবে বিচার।

২৪ সেপ্টেম্বর মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। সেদিন সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। তাকে জেরা করেন আমির হোসেন।

মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়ে দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হন। অন্য সাক্ষীদের জবানবন্দিতে গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশজুড়ে হত্যাযজ্ঞের বীভৎস বর্ণনা উঠে এসেছে। এসবের জন্য শেখ হাসিনা, কামালসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রের মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৮ হাজার ৭৪৭। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দ তালিকা ও প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে।

গত ১২ মে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা মামলার প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেন।